মিয়ানমার-ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি
জাতির পিতাই প্রথম করেছিলেন সমুদ্রসীমা আইন
স্টাফ রিপোর্টার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে (বিসিজি) অতিআধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি, জাহাজ ও হেলিকপ্টার দিয়ে সজ্জিত করে একটি আধুনিক ও ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, কেউ পিছিয়ে থাকবে না। কোস্টগার্ড বাহিনীতে আধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক জাহাজ, হেলিকপ্টার এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সক্ষমতা অর্জন করবে। গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওস্থ কোস্টগার্ড সদরদফতরে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের ‘২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং কোস্টগার্ড দিবস-২০২৪’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব একথা বলেন। একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কোস্টগার্ডের অপারেশনাল সক্ষমতা বাড়াতে ভি-স্যাটনেট কমিউনিকেশন সিস্টেম এবং ছয়টি স্টেশন ও আউটপোস্ট এবং তাদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেন। এর আগে সকাল ১০টার দিকে কোস্টগার্ডের ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন ও পদক প্রদান অনুষ্ঠানে অংশ নিতে কোস্টগার্ডের সদরদফতরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। পরে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ কাজের জন্য কোস্টগার্ডের কর্মকর্তা, নাবিক ও অসামরিক ব্যক্তিদের হাতে পদক তুলে দেন তিনি। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং কোস্টগার্ড মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশাল সমুদ্রের সম্পদ আহরণ করা আমাদের দায়িত্ব। এজন্য সুনীল অর্থনীতি ঘোষণা করা হয়েছে। আরও গবেষণা দরকার। আমরা সমুদ্রসীমার অধিকার নিশ্চিত করেছি। সেখানকার সম্পদ এখন দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই সমুদ্রসীমার অধিকার অর্জন করেছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে আধুনিক ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে খুব শীঘ্রই এ বাহিনীতে যুক্ত হতে যাচ্ছে উন্নত প্রযুক্তির জাহাজ, মেরিটাইম সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম, হোভারক্রাাফট ও দ্রুতগতিসম্পন্ন বোট। তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি সমুদ্র নির্ভর পেশায় নিয়োজিত জনসাধারণের ও নৌ পথের নিরাপত্তায় কোস্টগার্ড-এর গভীর সমুদ্রে টহল উপযোগী আরও ৪টি ওপিভি, ২টি মেরিটাইম ভার্সন হেলিকপ্টার সংগ্রহের অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভি-স্যাটনেট কমিউনিকেশন সিস্টেমের অন্তর্ভুক্তি যা কোস্টগার্ডকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর সাথে সংযুক্ত করবে এবং যোগাযোগ ও অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমি ২টি হেলিকপ্টার উইংয়সহ এভিয়েশন উইং গঠনের নীতিগত অনুমোদন প্রদান করেছি যা সংযোজনের মাধ্যমে কোস্টগার্ডকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
জাতির পিতাই প্রথম করেছিলেন সমুদ্রসীমা আইন: সমুদ্রসীমা আইন জাতির পিতাই প্রথম করেছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সমুদ্রসীমা আইন জাতির পিতাই প্রথম করেছিলেন। ’৭৫-এর হত্যাকাণ্ডের পর দায়িত্বে আসা কোনো সরকারই কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়নি। সমুদ্রে বাংলাদেশ নিজস্ব সীমানার মালিক হয়েছে। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে এটি সম্ভব করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। কোস্টগার্ডের উন্নয়নের জন্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিরোধী দলে থেকেও সংসদে কোস্টগার্ড আইন পাস করেছিল আওয়ামী লীগ। এখন সমুদ্রে বাংলাদেশ নিজস্ব সীমানার মালিক হয়েছে। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে এটি সম্ভব করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। আর এবার সমুদ্রের সম্পদ আহরণে গবেষণা জাহাজ সংগ্রহের পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। তিনি জানান, এই বাহিনীর জন্য ডকইয়ার্ড নির্মাণ হচ্ছে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায়। এছাড়া আরও দুটি জাহাজ ও হেলিকপ্টার যুক্ত হচ্ছে কোস্টগার্ডে। আরও যুক্ত হবে আধুনিক মেরিটাইম সার্ভিল্যান্স সিস্টেম। অচিরেই ত্রিমাত্রিক বাহিনী হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড।
১৫ বছরে কোস্টগার্ডের অনেক সক্ষমতা বেড়েছে: প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৫ বছরে কোস্টগার্ডের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। আধুনিক সরঞ্জামে সজ্জিত করার মাধ্যমে কোস্টগার্ডকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। কোস্টগার্ডে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক সরঞ্জাম যুক্ত করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাহিনীর মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আমরা মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় একটি ডকইয়ার্ড নির্মাণ করছি। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর সব প্রতিষ্ঠান গড়ে দিয়েছিলেন জাতির পিতা। তিনিই প্রথম সমুদ্রসীমা আইন করেছিলেন। ১৯৭৫-এর পর জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিল। সমুদ্রসীমার যে অধিকার আছে, এ ব্যাপারে কেউ কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। আজ সমুদ্রে বাংলাদেশ নিজস্ব সীমানার মালিক হয়েছে।
ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে: কোস্টগার্ডকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন দুটি জাহাজ ও হেলিকপ্টার যুক্ত হচ্ছে কোস্টগার্ডে। যুক্ত হবে আধুনিক মেরিটাইম সার্ভিল্যান্স সিস্টেম। অচিরেই ত্রিমাত্রিক বাহিনী হতে চলেছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড। নিজস্ব প্রশিক্ষণ বেইজ নির্মাণ করা ও অত্যাধুনিক নৌযান সংযোজনে কোস্টগার্ড সদস্যরা এখন অনেক দক্ষ জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের মধ্যে সেতুবন্ধন করতে পারে বাংলাদেশ। সেজন্য সমুদ্র উপকূলের নিরাপত্তা বিধান একান্তভাবে দরকার। সব বাহিনীকেই আধুনিক স্মার্ট বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ কোস্টগার্ড দেশের সমুদ্র ও উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্যসম্পদ রক্ষা, বনজসম্পদ রক্ষা, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ রক্ষাসহ নানা কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পটুয়াখালী অঞ্চলে নিজস্ব প্রশিক্ষণ বেইস তৈরির মাধ্যমে কোস্টগার্ড-এর জনবলের প্রশিক্ষণ সক্ষমতাও বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা পরবর্তীতে তিনি নিজেই ‘বিসিজি বেইস অগ্রযাত্রা’ নামে কমিশন করেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ড-এর জন্য ইনশোর প্যাট্রল ভেসেল, ফ্লোটিং ক্রেন, টাগ বোট এবং বিভিন্ন ধরনের হাইস্পিড বোট তৈরি করা হয়েছে। এ বাহিনীর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়ায় একটি ডকইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, তিনি দৃঢ়ভাবে আশাবাদি যে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন জাহাজ ও সরঞ্জাসের অন্তর্ভূক্তি এ বাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এ বাহিনীর অধিকতর সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও সুনীল অর্থনীতি ও সমুদ্রে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য এ বাহিনীর আধুনিকায়নে রূপকল্প ২০৩০ ও ২০৪১ অনুযায়ী বর্তমান জনবল ধাপে ধাপে বৃদ্ধি করে ১৫ হাজার জন করার পরিকল্পনাও তাঁর সরকারের রয়েছে। তিনি বলেন, জনগণের বন্ধু হিসেবেই নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন। নিজেদের আস্থা অর্জনের মধ্যদিয়ে। তার সরকারের যে লক্ষ্য আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা, সেজন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকেও আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান নির্ভর করে গড়ে তুলছে সরকার এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আত্মমর্যাদা ও আত্মসম্মান নিয়ে বিশে^ মাথা উঁচু করেই চলতে চাই। সেজন্য দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় এনে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর জন্যও তিনি তাঁর আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি আমরা। সেই বিজয়ের পতাকা সমুন্নত রেখেই দেশকে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দারিদ্রের হার হ্রাস সহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের বিভিন্ন কর্মসূচি সরকার বাস্তবায়ন করছে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে আর একটি মানুষও ভুমিহীন-গৃহহীন থাকবে না, সকলেরই মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা হবে। ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবেলা করে আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিত করারও পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। শেখ হাসিনা দৃঢ় কন্ঠে বলেন, ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে এবং ২০৪১ সাল নাগাদ জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ তথা স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কোস্টগার্ডের বিভিন্ন ভৌত অবকাঠামো উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী
কোস্টগার্ডকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলছে সরকার


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ